ঢাকা    সোমবার, ২০ মে ২০২৪


প্রচ্ছদ » অন্যান্য » প্যারী সুন্দরী দেবী নীল বিদ্রোহী এক নারী জমিদার

প্যারী সুন্দরী দেবী নীল বিদ্রোহী এক নারী জমিদার


আখতার হোসেন খান,ভূঞাপুর( টাঙ্গাইল )
প্রকাশ: বুধবার, ১১ অক্টোবর ২০২৩


 প্যারী সুন্দরী দেবী নীল বিদ্রোহী এক নারী জমিদার

টাঙ্গাইল:  ইংরেজ শাসনের কলঙ্কময় অধ্যায় হচ্ছে ‘নীলচাষ’। ভারবর্ষের দরিদ্র মানুষকে দরিদ্র থেকে নিঃস্ব করেছে এই নীলচাষ। নীলচাষের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে অনেক পুরুষ প্রাণ দিয়েছে। অনেক নারী সম্ভ্রম এবং জীবন দু’টোই দিয়েছেন। তাই নীলকরদের বিরুদ্ধে ১৮৬০ সালে হয়েছে বিদ্রোহ। সেই নীল বিদ্রোহের অন্যতম নারী জমিদার প্যারী সুন্দরী দেবী।
কুষ্টিয়া জেলার মীরপুর থানার সদরপুরে ছিল তাদের আদি বসতি। কৃষ্ণনাথ সিংহের সাথে তার বিবাহ হয় এবং অল্প বয়সেই তিনি বিধবা হন। প্যারী সুন্দরী দেবী নি:স্বন্তান বিধবা নারী। তার পিতা রামানন্দ সিংহ ছিলেন বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি ইংরেজ রেশম কুঠিরের নায়েব। পরে মুর্শিদাবাদ নবাবের কাছে কাজ করার সময় মীরপুর এলাকায় জমিদারীর পত্তন করেন। প্যারীসুন্দরী দেবী ছিলেন তার কনিষ্ঠা কন্যা। পিতার জমিদারীর অর্ধাংশ লাভ করেন তিনি। ছোটবেলা থেকে মেধাবী ও পিতার বিষয় সম্পত্তি দেখাশোনায় সিদ্ধহস্ত ছিলেন প্যারী। অবিভক্ত ভারত বর্ষের নদীয়া জেলার কুখ্যাত নীলকর টমাস আইভান কেনীর বিরুদ্ধে নীল বিদ্রোহে কৃষকদের নেতৃত্ব দেন তিনি ।
নীলকর টমাস আইভান কেনীর ক্রমাগত অত্যাচারে প্যারী সুন্দরী দেবীর প্রজারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। কুষ্টিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কেনীর দৌরাত্ব বৃদ্ধি পায়। সে জোরপূর্বক নীল চাষ করাতে থাকলে প্রজারা প্যারী সুন্দরীর দেবীর কাছে প্রতিকারের আর্জি জানায়।
প্যারী সুন্দরী তার লাঠিয়ালদের নিয়ে কেনীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে, কেনী লাঠিয়ালদের পরাজিত করে প্যারী সুন্দরীর ভাড়লকুঠি লুট করে এবং অত্যাচারের মাত্রা বৃদ্ধি করে। (মীর মশাররফ হোসেন তার ‘উদাসীন পথিকের মনের কথা’ বইতে কেনীর অত্যাচারের কাহিনী তুলে ধরেছেন।)
কেনীকে সমুচিত জবাব দিতে প্রজা-চাষী-মজুর, হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সবাইকে একজোট করেন প্যারীসুন্দরী দেবী । তার ভরসায় বিপুল জনতা কেনীর শালঘর মধুয়ার নীলকুঠি আক্রমণ করে এবং কেনী পালিয়ে বেঁচে যায়। কেনী প্যারী সুন্দরীর দেবী বিরুদ্ধে মামলা করলে, প্যারী সুন্দরী সগর্বে বলেন- “আমার লাঠিয়ালগণ কুঠি লুট করেছে জেনে আমার সুখবোধ হচ্ছে, বাঙালি মেয়ে সাহেবের কুঠি লুট করেছে এর চেয়ে বেশি সুখের আর কি আছে! এই ঘটনায় অপমানিত কেনী ঘোষণা করেন, প্যারী সুন্দরীকে জ্যান্ত ধরে আনলে এক হাজার টাকা পুরস্কার দেবো, আর এই মহিলাকে কুঠিতে মেম সাজিয়ে রাখবো। এই ঘোষণায় বিন্দুমাত্র না দমে সাহসী প্যারী সুন্দরী দেবী পাল্টা ঘোষণা করেন, কেনীর মাথা এনে যে তার সামনে রাখবে, তাকে তিনি দেবেন এক হাজার টাকার তোড়া। কৃষক জনতা ও প্যারী সুন্দরীর লাঠিয়ালরা আবার কেনীর কুঠি আক্রমণ করে ধুলিস্বাৎ করে দেয়। কেনী পালিয়ে বাঁচলেও দারোগা মহম্মদ বক্স প্রজাদের হাতে খুন হয়।
দারোগা খুনের ঘটনায় প্যারী সুন্দরীর বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সরকার মামলা করে। প্রহসনের বিচারে ইংরেজ সরকার তার সমুদয় সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে। প্যারী সুন্দরী এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন এবং বহু টাকা ব্যয় করে জমিদারী ফেরত পান।
প্যারী সুন্দরী মামলার খরচ চালাতে ঋণভারে জর্জরিত হয়ে জমিদারীর বিরাট এক অংশ পত্তনী বন্দোবস্ত দেন। পরে তার দত্তক পুত্র তারিণী চরণ সিংহকে দান করে দেন।
এই নির্ভীক নারী জমিদার ক্ষমতাবান নীলকরদের বিরুদ্ধে যে বিরাট অসম যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন তা ভারত বর্ষের কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে

এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছে এবং নীল বিদ্রোহের ইতিহাসে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে।
ড. আবুল আহসান চৌধুরী প্যারীসুন্দরী দেবী সম্পর্কে লিখেছেন - “প্যারী সুন্দরী প্রজাদরদী, স্বদেশপ্রেম ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় লালিত এক অসামান্য জননেত্রী।”

এনএন

বাংলাদেশ সময়: ১৭:১৬:১৫   ৬২৬ বার পঠিত  |   







অন্যান্য থেকে আরও...


কুয়াকাটার পর্যটন ব্যবসায় দাবদাহের প্রভাব, বাতিল হচ্ছে বুকিং
ঈদের ছুটিতে কুয়াকাটা সৈকতে বাড়ছে পর্যটকের ভিড়
ঈদে কুয়াকাটা সৈকতে পর্যটকদের ভীড়
আজ চাঁদ দেখা যায়নি, ঈদ বৃহস্পতিবার
ঈদ-পরবর্তী ছুটিতে পর্যটকদের বরণে প্রস্তুত কুয়াকাটা



আর্কাইভ