ঢাকা শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫
শিরোনাম
কুড়িগ্রাম: উলিপুরে চাহিদার চেয়ে প্রচুর কোরবানীর পশু উৎপাদন হয় চরাঞ্চলে। এ সমস্থ পশুর বেশীর ভাগ ক্রেতাই ঢাকা চট্রগ্রামসহ বাইরে থেকে আসে। এবার দাম বেশী ক্রেতা কম,ফলে এখনও জমেনি কোরবানীর পশুর হাট। চরম হতাশায় ভুগছেন খামারী ও প্রান্তীক পর্যায়ের গরু উৎপাদনকারীরা। হাট গুলোতে এ বছর হাসিল আদায় হচ্ছে সরকারী রেটে।
কিন্ত হাটে দালাল ছাড়া বাইরের ক্রেতা নাই বললেই চলে। সরবরাহ প্রচুর থাকলেও চাহিদামত ক্রেতা মিলছে না। ফলে চরম হতাশায় পড়েছেন খামারীরা। অন্য বছর ঈদের ২০ দিন আগে থেকে পশুর বেচা কেনা শুরু হলেও এবার তার উল্টো চিত্র।
উপজেলা প্রানীসম্পদ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে,মাঝারী, ছোট ও মিনি মোট খামার ২ হাজার ৭০৩টি। এ বছর কোরবানীর চাহিদা নির্ধারন করা হয়েছে ১৫ হাজার ৬১৬টি। খামার, বাড়ী ও চর গুলোতে পশু রয়েছে ৫৪ হাজার ২৭৫টি। সেই হিসাবে উদ্বৃত্ত পশুর সংখ্যা ৩৮ হাজার ৬৫৯টি। গত বছর পশু বিক্রি হয়েছিল ৩৭ হাজার ১৫২টি।
উলিপুর হাটের ইজারাদার কায়ছার আলী বলেন, গত বছর ১৫ থেকে ২০ দিন আগে উলিপুর, চিলমারী জোড়গাছ ও দুর্গাপুর সহ বিভিন্ন হাট থেকে ৫০/ থেকে ৬০ হাজার গরু বেচা বিক্রি হতো। এ সব গরুর ৭০ ভাগ ক্রেতাই ঢাকা, চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যবসায়ী। এবার এখন পর্যন্ত কোন গরু ব্যবসায়ী আসেনি। দুই একটা ব্যবসায়ী আসলেও তারা হাটে গরু কিনছে না। তারা সরাসরি খামারীদের সাথে যোগাযোগ করে সীমিত আকারে গরু কিনছেন বলে জানান। তবে ঈদের আগের দুইটি হাট ভাল বেচা কেনা হবে বলে তার আশা।
জেলার প্রধান পশুর হাট গুলোর একটি উলিপুর পশুর হাট। গত সোমবার হাট ঘুরে দেখা যায়। অন্নান্য বছরের তুলনায় পশু আসছে কম, দামও বেশী। অন্যবার বাইরের গরু ব্যবসায়ীর পাশাপাশি স্থানীয় ক্রেতার ভিড় লক্ষ করা গেলেও এবার তার উল্টো চিত্র দেখা যায়। মাত্র কয়েকজন গরুর পাইকার দেখা গেলেও বেচা বিক্রি নাই বললেই চলে।
ঢাকা থেকে আসা পাইকার মোসলেম উদ্দিন বলের, হাটটিতে হাসিলের ঝামেলা না থাকলেও দালাল চক্রের উৎপাতটা খুব বেশী। তাছাড়া পশুর দাম বেশী বলে মাত্র কয়েকটি খাসি কিনেছেন। পরিবহন খরচ বেড়েছে অনেক। তাছাড়া পশুর মালিকরা দাম ছাড়ছে না। ফলে বাইরের ব্যবসায়ীরা কম আসছে।
স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী মো. মন্জু মিয়া বলেল,অন্যবার অনেক আগের থেকে বেচা বিক্রি শুরু হয়। এ সময় প্রতি হাটে ৭ থেকে ৮টি গরু বেচাকিনি হতো এবার বেচা বিক্রি নাই। তিনি স্থানীয় ভাবে এ হাটে গরু কেনেন,ওহাটে বিক্রি করেন। এখন পর্যন্ত বাইরের ব্যবসায়ী নামেনি। তাছাড়া স্থানীয় ক্রেতারও দেখা মিলছে না। এর কারন হিসাবে তিনি, মানুষের অর্থনৈতিক সংকটে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তিনি জানান।
হাটের ইজারদার সাইফুল ইসলাম বলেল, হাসিল(টোল) সরকারী রেটে নেওয়া হচ্ছে। গরু বেচা বিক্রি নাই বললেই চলে সারা দিন মিলে ৭ টা রশিদও কাটতে পারি না। অন্যবার এই সময় ২ শত থেকে ৩ শত গরু বেচা কেনা হতো। বাইরের গরু ব্যাপারী না আসা এবং স্থানীয়রা এত আগে গরু কিনছেন না বলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পুরো হাটে ১১ টি ইজারাদার টেবিল রয়েছে সব মিলে ৭০ থেকে ৮০টি গরু বেচা কিনি হচ্ছে। তার উপর হাটটি এবার ডাক হয়নি। ফলে আমরা খাস আদায় করে ব্যাগারি দিচ্ছি।
উলিপুর হাটে ফরকের হাট থেকে ৩টি গরু নিয়ে এসেছেন খামারী গোপরান আলী, বেলা ৫টা পর্যন্ত থেকে একটা গরুও বেচতে না পেরে ফেরত যাচ্ছেন। তিনি বলেন তেমন একটা ক্রেতা নাই। গরুর দাম শুনে চলে যায়। তাই তিনি হতাশ হয়ে জানান, গরু বিক্রি তো দুরের কথা পরিবহন ও খাটা খাটনিটাই বৃথা গেল।
দুর্গাপুর গোড়াই পিয়ার গ্রামের হালিমুর এগ্রো ফার্ম এর মালিক হালিমুর রশিদ বলেন,এবার তার খামারে ৩৪টি গরু মোটা তাজাকরন করে কোরবানীর জন্য প্রস্তুত করেছেন। এখন পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে মাত্র ২টি। একটা পাটী আসছিল গরুর দাম উৎপাদন খরচের চেয়ে ৩০ ভাগ দাম কম বলছে। আর কোন ব্যাপারী এখন পর্যন্ত আসেনি। অন্যবার এ সময় সব গরু বিক্রি করেছিলাম। গরু বিক্রি না হলে অনেক ক্ষতি গুনতে হবে বলে তিনি দুচিন্তায় পড়েছেন।
সাবেক সেনা সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মো. ফজলুল হক বলেন,গরুর আমদানী আছে। কিন্ত সে পরিমান ক্রেতা নাই। তবুও গরু মালিক দাম ছাড়ছে না। অনেক ঘুড়াঘুরি করে এক লাখ পাচ হাজার টাকা দিয়ে একটা ষাড় গরু কিনেছেন। কৃষকরা ধানের দাম পাচ্ছে না। ফলে গ্রামাঞ্চলের মানুষের আর্থিক সক্ষতা কমে গেছে।
এন/ আর
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৪৮:৪৭ ১১৮ বার পঠিত | ● উলিপুর ● পশুর ● হাট