ঢাকা    বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫


আপনার এলাকার খবর
প্রচ্ছদ » ধর্ম » ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব ও আমাদের বাংলা ভাষা

ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব ও আমাদের বাংলা ভাষা


নিউজ ডেস্ক
প্রকাশ: শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫


 

 

 

ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব ও আমাদের বাংলা ভাষা

মায়ের ভাষায় কথা বলা সকল মানুষের স্বভাব । মাতৃভাষা মহান আল্লাহর নেয়ামতরাজির মধ্যে অন্যতম। শিশু প্রথমে মায়ের ভাষায় কথা বলা শিখে। তাই ইসলাম মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং খেদমতের গুরুত্ব দিয়েছেন।

আমাদের প্রভু সকল নবী-রাসূলকে স্ব-জাতির ভাষাভাষী করে প্রেরণ করেছেন। যাতে তারা স্বীয় জাতিকে দ্বীনের দাওয়াত স্পষ্টভাবে পৌঁছাতে পারেন। নবীর ভাষা যদি উম্মত না বোঝেন, তাহলে দাওয়াতি কাজ সুন্দর ভাবে করা সম্ভব নয়।

পবিত্র কুরআনের সূরা ইব্রাহীমের ৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: আমি রাসূলগণকে তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করে প্রেরণ করেছি, যাতে তাদের (দ্বীন) স্পষ্টভাবে বুঝতে পারেন।

এ বিষয়ে কোরআনে কারিমে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি আপনার রবের পথে দাওয়াত দিন কৌশল ও উত্তম ভাষণের মাধ্যমে। ’–সূরা নাহল: ১২৫

ফেরাউনকে দাওয়াত দেয়ার জন্য নির্দেশ দিলে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’আলার কাছে তার ভাইকে সাথী বানিয়ে দেয়ার জন্য ফরিয়াদ করেন, কেননা হারুন আ:  এর ভাষা ছিল মুসা আঃ এর চেয়ে সুন্দর এবং স্পষ্ট।   এ প্রসেঙ্গে কুরআন কারিমে এসেছে, ‘(হে প্রভূ) আমার ভ্রাতা হারুন আমার ছেয়ে সুন্দর ও স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারে। সুতরাং তাকে আমার সঙ্গে সাহায্যকারী হিসেবে প্রেরণ করুন। সূরা ক্বাসাস- ৩৪

ভাষা আল্লার সৃষ্টির বড় একটি নিদর্শন, পবিত্র কুরআনে হাকীমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে এক নিদর্শন এই যে, নভো মণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে। সূরা রুম-২২

সব ভাষা আল্লাহরই সৃষ্টি:

আল্লাহ সব কিছুকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি ব্যতীত সৃষ্টি  করার ক্ষমতা কারোই নেই, আর ভাষা

সূরা আর রহমানের ৩ ও ৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, “তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন, এবং তাকে বর্ণনার উপযোগী ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন। মায়ের মুখ থেকে শুনে শুনে আমরা যে ভাষা শিখেছি সেটাই আমাদের মাতৃভাষা। মাতৃভাষা প্রতি ভালোবাসা নেই এমন এমন মানুষ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তাইতো বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) গৌরব করে বলেছিলেন “আমি আরবের শ্রেষ্ঠ বিশুদ্ধভাষী

জাতিসংঘের একটি প্রকাশনায় বলা হয়েছে পৃথিবীতে প্রায় সাত হাজার বা তারও অধিক ভাষা আছে। বিশ্বের সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা হলো ১১টি। তার মধ্যে বাংলাভাষাও একটি অন্যতম ভাষা। 

মহান আল্লাহর নিদর্শন রয়েছে ভাষার ভিন্নতায় । সূরা রূম এর ২২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, “তাঁর আরও এক নিদর্শন হচ্ছে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।

বর্তমান পৃথিবীতে ৭০৯৯টি ভাষা প্রচলিত আছে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে মর্যাদা গ্রহণ করেছে আমাদের  মাতৃভাষা বাংলা।

ইতিহাস থেকে জানা যায়:

১৯৪৮ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত গণপরিষদে উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ব্যবহারের দাবি জানান। তার দাবি অগ্রাহ্য হয়। ফলে ২৬শে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ধর্মঘট পালিত হয়। ২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ পুনর্গঠিত হয়েছিল৷ এবং ১১ মার্চ সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয় এবং বাংলা ভাষা দাবি দিবস ঘোষণা দেওয়া হয়।

পাকিস্তানের গর্ভনর জেনারেল মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালের ১৯শে মার্চ ঢাকায় আসেন। ২১শে মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘোষণা দেন “উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা।” এরপর ২৪শে মার্চ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ঘোষণা দিলে ছাত্ররা তার উক্তির চরম প্রতিবাদ জানায়। সেই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পরে আমার দেশের দামাল ছেলেরা।

আমাদের বাংলা ভাষার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন,  শহীদ আব্দুস সালাম (ফেনী জেলার গর্বিত সন্তান),  পশ্চিমবঙ্গ মুর্শিদাবাদ জেলার বাবলা গ্রামের সন্তান  শহীদ বরকত, মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার  রফিক, পশ্চিমবঙ্গ হুগলি জেলার  শফিউর, গফরগাঁওয়ের পাঁচাইরা গ্রামের আব্দুল কাদেরের সন্তান আব্দুল জব্বার, সর্বকনিষ্ঠ শহীদের নাম  ওহিউল্লাহ, পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের জীবনকে বিলিয়ে দিয়ে আমাদের এই মাতৃভাষাকে মর্যাদায় আসীন করেছেন।

ভাষা সৈনিকদের অনেকেই মর্যাদা  পেলেও ভাষা সৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযম ছিলেন নির্যাতিত বাংলা ভাষার জন্য অকুতোভয় সৈনিক। তিনি ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে জুলুমের শিকার হয়ে কারাগারে বন্দি ছিলেন।

এত রক্ত এত জীবন দেয়ার পরে যে ভাষা আমরা পেয়েছি সে বাসা আজও আমাদের দেশের সকল অফিস আদালতে অফিসিয়াল বাসা হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে না। আমাদের এই ভাষাকে বিচার বিভাগ সহ সকল স্তরে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনের পরে বাংলাদেশকে  নতুন করে সাজাতে হলে আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে।

শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার শিরিকি সংস্কৃতি বাদ দিয়ে, ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী তাদের জন্য কুরআন খতম করে তাজবিহ আদায় করে দোয়া করার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে করে তারা পরবর্তী জীবনে ও শান্তি এবং সমৃদ্ধি লাভ করে আল্লাহর জান্নাত অর্জন করতে পারেন।

 

মুফতি মো. রেজাউল করিম

প্রভাষক (আরবী)

আবুবকরপুর আমিন ইসলামিয়া কামিল (এমএ) মাদ্রাসা

চরফ্যাশন,ভোলা।

 

বাংলাদেশ সময়: ১৯:০০:৩৯   ২৫৬ বার পঠিত  |         







ধর্ম থেকে আরও...


চাঁদ দেখা গেছে, কাল থেকে রোজা
ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব ও আমাদের বাংলা ভাষা
পবিত্র শবে বরাত শুক্রবার
আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)
রংপুর ঈদের প্রধান জামাত সকাল ৮ টায়



আর্কাইভ